ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের সঙ্গে বর্ণবাদী আচরণের বিষয়টি ফুটবল দুনিয়ায় ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। জলও গড়িয়ে আরো অনেক দূর। নিজের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রমাণ হিসেবে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র রীতিমতো ভিডিও নিয়ে হাজির। তার দেশ ব্রাজিল প্রতিবাদের আগুনে ফুঁসছে। পরিস্থিতির ব্যাপকতা আঁচ করতে পেরে স্পেনের কর্তাব্যক্তিরাও নড়েচড়ে বসেছেন।
স্পেনের ফুটবল ফেডারেশন প্রধান দ্রুত ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি করেছেন। স্পেনের প্রসিকিউটর অফিস থেকে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। টনক নড়েছে স্পেনের পুলিশেরও। এরই মধ্যে অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত রোববার ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে লা লিগার ম্যাচে বর্ণবাদের শিকার হন রিয়াল মাদ্রিদের ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। স্বাগতিক ভ্যালেন্সিয়ার সমর্থকরা পুরো ম্যাচেই ভিনিকে লক্ষ্য করে নানা রকম বর্ণবাদী স্লোগান দেন। এমনকি ভ্যালেন্সিয়ার খেলোয়াড়রাও কড়া ট্যাকল, কটু কথা-নানাভাবে ভিনিসিয়ুসকে উত্ত্যক্ত করে। মেজাজ হারিয়ে ভিনিসিয়ুসও বারবারই তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ জানান। যা নিয়ে দুই দলের খেলোয়াড়রা বারবারই জড়িয়ে পড়েছেন সংঘর্ষে। ধাক্কাধাক্কি, এমনকি একটু আধটু হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। খেলাও বন্ধ হয়ে যায় বেশ কয়েক বার। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, লাগামহীনভাবে বর্ণবাদের শিকার হন যিনি, সেই ভিনিসিয়ুসই প্রতিবাদ জানিয়ে পেয়েছেন লালকার্ড!
শুধু ভ্যালেন্সিয়ার ম্যাচেই নয়, ভিনি অনেক বারই বর্ণবাদের শিকার হয়েছেন। রোববারের ম্যাচ শেষে সবটুকু ক্ষোভই উপড়ে দেন তিনি। ম্যাচ শেষে ভিনিসিয়ুস সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এক পোস্টে ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানান। তিনি সরাসরিই কাঠগড়ায় দাঁড় করান স্পেনের ফুটবল ফেডারেশন ও লা লিগা কর্তৃপক্ষকে। পোস্টে তিনি লেখেন, ‘স্পেনে বর্ণবাদ এখন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ তার সেই প্রতিবাদ দাবানলের মতো মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের আনাচে -কানাচে। স্বয়ং ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো থেকে শুরু করে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভা, মেসি, নেইমার, এমবাপ্পে, কাইল ওয়ার্কারদের মতো তারকা ভিনিসিয়ুসের পাশে দাঁড়ান।
পরে ভিনিসিয়ুস বর্ণবাদের শিকার হওয়া নানা সময়ের ভিডিও ফুটেজ একত্র করে প্রমাণ হিসেবে পোস্ট করেছেন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। ভিনির সেই ভিডিও পোস্টের পর তার দেশ ব্রাজিল প্রতিবাদের আগুনে ফুঁসছে। তবে আশার কথা এই, স্পেনের কর্তৃপক্ষ কোমড় বেঁধে মাঠে নেমে পড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মোট সাত জনকে গ্রেফতার করেছে স্প্যানিশ পুলিশ। এর মধ্যে তিন জনকে ভ্যালেন্সিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে রবিবারের ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে।
অন্য একটি অভিযান চালিয়ে চার তরুণকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে আটক করা হয়েছে গত জানুয়ারির একটি ঘটনায়। গত ২৬ জানুয়ারি কোপা ডেল রের কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল মাদ্রিদের দুই ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ও অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদ। ঐ ম্যাচের আগে রিয়ালের অনুশীলন সেন্টারের পাশেই একটা ব্রিজের উপর একটা মূর্তির গায়ে ভিনিসিয়ুসের ২০ নম্বর জার্সি পরিয়ে দেওয়া হয়। সঙ্গে একটা ব্যানারও টাঙিয়ে দেওয়া হয়, যাতে লেখা ছিল, ‘মাদ্রিদ রিয়ালকে ঘৃণা করে!’
গায়ের রঙ কালো বলে স্পেনে প্রায়ই বর্ণবাদের শিকার হচ্ছেন ব্রাজিলের ২২ বছর বয়সি তারকা। ব্যাপারটা এমন হয়ে দাঁড়িয়ে যে, অ্যাওয়ে ম্যাচ হলেই ভিনিসিয়ুসকে মাঠে নামতে হয় বর্ণবাদী গালি শোনার প্রস্তুতি নিয়ে!