চলনবিলের অন্যতম প্রধান নদী বড়াল। ক্রমাগত দখল, দূষণ আর অপরিকল্পিত উন্নয়নে এক সময়ের প্রমত্তা বড়াল এখন মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। অনেক স্থানে নদীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে। চলনবিলের অন্তর্গত পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুরা ও ফরিদপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীর ভাঙ্গুরা উপজেলার দুটি অংশ এবার জলমহাল হিসেবে ঘোষণা করে ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে পাবনা জেলা প্রশাসন।
বিজ্ঞপ্তি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ঘোষিত ৬৩টি জলমহালের ৩১টিই জেলার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে প্রবাহিত ১০টি নদীর অংশ।
তবে এর মধ্যে থেকে আটঘরিয়া উপজেলার ইছামতী নদীর অংশ ইছামতী পুনরদ্ধার প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এ অংশ লিজ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
জলমহাল ইজারার নামে নদীর বিভিন্ন অংশ জলমহাল হিসেবে লিজ দেওয়ার উদ্যোগে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
চলনবিলের বড়াল রক্ষা আন্দোলনের সংগঠক বলেন, ‘প্রবাহিত নদীকে কখনই এভাবে লিজ দেওয়া যায় না। বড়াল নদীকে রক্ষার জন্য আমরা দিনের পর দিন আন্দোলন করে আসছি”
ইতোপূর্বে আন্দোলন করে চাটমোহরে বড়াল নদীর লিজ বাতিল করা হয় বলেও জানান তিনি।
মাছ ধরার জন্য লিজ নিয়ে প্রভাবশালীরা পুরো নদীতে দখলদারত্ব চালিয়ে আসছে দিনের পর দিন। নদীকে প্রবাহিত রাখতে নদীতে এ ধরনের লিজ বন্ধের দাবি জানান তিনি।
পাবনা জেলা পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক বলেন, নদী ও জলমহাল এক বিষয় নয়।
নদী একটি জীবন্ত সত্ত্বা হলেও নদীর বিভিন্ন অংশকে জলমহাল হিসেবে লিজ দেওয়ার উদ্যোগ নদীর জীবন্ত সত্ত্বাকে অস্বীকার করা হয়।
প্রকৃতি ও পরিবেশের স্বার্থে নদী রক্ষার আহ্বান জানান তিনি।
এ বিষয়ে পাবনা জেলা প্রশাসক ও জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. আসাদুজ্জামানের বক্তব্য জানতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল ধরেননি।
পাবনা জেলা প্রশাসন কর্মকর্তা আরডিসি (রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর) ফারিস্তা করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সব কিছু নিয়েম মেনেই করা হচ্ছে। নতুন করে জলমহাল ঘোষণা করা হয়নি। যে জলমহালগুলো আগে ইজারা দেওয়া হয়েছে, ইজারার জন্য সেগুলোই উল্লেখ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। পূর্বের ফাইল অনুসরণ করেই কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে।
এদিকে পাবনার ইছামতী নদীকে পুনরুজ্জিবিত করার জন্য যখন সরকার ১৫৫৪ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে তখন ইছামতী নদীর বিভিন্ন উপজেলার একাধিক স্থানে এভাবে মাছ চাষের জন্য লিজ দেওয়ার উদ্যোগ নেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আরডিসি ও পাবনা জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ফারিস্তা করিম বলেন, ইতোমধ্যে ইছামতী নদীর আটঘরিয়া উপজেলার অংশে লিজের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। তবে ইছামতীর অন্য জলমহালগুলোতে উন্নয়ন প্রকল্পের কোনো কাজ নেই বলে জানান তিনি। ফলে লিজ দিতে সমস্যা হবে না।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ৬৩টি জলমহাল তিন বছরের জন্য (১৪৩১ থেকে ১৪৩৩ বাংলা সন) লিজ নেওয়ার জন্য প্রকৃত মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিকে ৩ ফাল্গুনের মধ্যে অনলাইনে আবেদন করার জন্য বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী জলমহাল ইজারা দেওয়ার কাজ সম্পন্ন করার কাজ চলছে।
আবেদন পাওয়ার পর যাচাই বাছাই করে জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি ইজারার সিদ্ধান্ত নেবেন।