এক পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার অভিযোগে প্রকাশ্যে অভিযুক্ত অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান। ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে যেখানে হত্যা করা হয়েছিল শনিবার (২৩ জুলাই) সেখানেই অভিযুক্ত যুবকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
আর এর মাধ্যমে দুই বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে প্রথম প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করল ইরান। রোববার (২৪ জুলাই)
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে শনিবার প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান। তবে এই ঘটনার সমালোচনা করেছে একটি এনজিও। প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকে ‘মধ্যযুগীয়’ হিসাবে নিন্দা করে সংস্থাটি জানিয়েছে, পশ্চিম এশিয়ার এই দেশটিতে ক্রমবর্ধমান দমন-পীড়ন নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
এএফপি বলছে, নরওয়েভিত্তিক এনজিও ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) বলেছে, প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা ওই ব্যক্তির নাম ইমান সাবজিকার। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর শিরাজে একজন পুলিশ অফিসারকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন তিনি। পরে শনিবার ভোরে অপরাধের স্থানে ফাঁসি দিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
সংস্থাটি বলছে, ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমও প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়ে খবর প্রকাশ করেছে এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ইমান সাবজিকার হিসাবে চিহ্নিত করেছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে জনসমক্ষে ফাঁসি দিয়ে তার সাজা কার্যকর করতে ইরানের সুপ্রিম কোর্ট আদেশ দেয়।
ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর)-এর পরিচালক মাহমুদ আমিরি-মোগাদ্দাম বলেছেন, ‘জনসাধারণের মধ্যে এই নৃশংস শাস্তির পুনঃপ্রবর্তনের উদ্দেশ্য হলো প্রতিবাদ করা থেকে মানুষকে ভয় দেখানো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে বেশি প্রতিবাদ করে — বিশেষ করে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে — এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কঠোর অবস্থান নেওয়ার মাধ্যমে এই ধরনের মধ্যযুগীয় কর্মকাণ্ড বন্ধের বিষয়ে কাজ করতে পারি।’
এএফপি বলছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত বেশ কিছু ছবিকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময়কার বলে দাবি করা হয়েছে। এসব ছবিতে ইরানের হালকা নীল এবং কালো ডোরাকাটা কারাগারের পোশাক পরা একজন ব্যক্তিকে একটি ট্রাকে ক্রেনের সাথে সংযুক্ত একটি দড়িতে মাটি থেকে কয়েক মিটার ওপরে ঝুলতে দেখা গেছে।
ইরানে মৃত্যুদণ্ড সাধারণত কারাগারের দেয়ালের মধ্যেই সংঘটিত হয়। তবে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, প্রকাশ্য মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়টি ইরানে একটি প্রতিরোধক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হত্যার সাথে সম্পর্কিত কোনো অপরাধ ঘটলে প্রকাশ্য মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়ে থাকে।
আইএইচআর বলছে, শনিবারের আগে ২০২০ সালের ১১ জুন ইরানে সর্বশেষ প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা ঘটেছিল। সংস্থাটি আরও বলছে, পুলিশ অফিসারদের হত্যার জন্য মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হওয়া আরও চার ইরানির ভাগ্য বর্তমানে একই ঝুঁকিতে রয়েছে।