গতকাল হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর জন্য চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন টাইগার অধিনায়ক তামিম ইকবাল। শুরুতে ব্যাট করতে নেমেই বিপাকে পড়ে যায় টাইগার শিবির। দলীয় স্কোর বোর্ডে ১ রান যুক্ত হতেই ইংলিশ অলরাউন্ডার স্যাম কারানের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন ওপেনার লিটন দাস। বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ওপেনিংয়ে নামা অধিনায়ক তামিমও। কারানের করা দ্বিতীয় ওভারেই ফেরেন তিনি। এতে করে ৩ ওভারে মাত্র ১৭ রান করেই টাইগাররা হারিয়ে ফেলেন দুই ব্যাটারকে। তবে এর পরের গল্পটা ভিন্ন। চতুর্থ উইকেটে এসে জুটি বাধেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম।
ভালোই চলছিল সে সময়। দুই জন মিলে এগিয়ে নিচ্ছিল ইনিংসটাকে। শান্ত হাঁকান সিরিজের দ্বিতীয় ফিফটি। তবে এরপরই যেন ভুল করে বসে উইকেটে থিতু হয়ে থাকা এই দুই ব্যাটার। ২৪.৩ ওভারে দুই ব্যাটসম্যানের ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন শান্ত। তার বিদায়ে ভাঙে ১২৮ বল স্থায়ী ৯৮ রানের জুটি। এরপর উইকেটে নেমে থিতু হয়ে বসেন দেশসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। আর অপরপ্রান্ত থাকা মুশফিক আউট হওয়ার পরই অন্য কেউ সেইভাবে উইকেটে বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি। তবে এক প্রান্ত আগলে খেলতে থাকেন সাকিব। তুলে নেন সিরিজে টানা দ্বিতীয় ও ওয়ানডে ফরম্যাটে ক্যারিয়ারের ৫২তম ফিফটি।
তবে তাকে থামতে হয় দলীয় ২৪৬ রানে। আউট হওয়ার আগে ৭১ বলে ৭ চারে ৭৫ রান করেন সাকিব। এরপর আর রান হয়নি, অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। আর এ অলআউট হওয়ার মধ্য দিয়ে থামে টানা ১৫ বছর ধরে অলআউট না হওয়ার দৌড়। ঘরের মাটিতে ওয়ানডে ফরম্যাটে সবশেষ ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ দল।
ইংল্যান্ড যখন বাংলাদেশের দেওয়া লক্ষ্য তাড়া করতে নামে তখন দেখা যায় অধিনায়ক তামিম ইকবালের পরিকল্পনায় পরিবর্তনের বিষয়টি। সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে স্পিন আক্রমণ দিয়ে শুরু করলেও এ ম্যাচ শুরু হয় মোস্তাফিজের পেস দিয়ে। তবে পরিকল্পনা বদলালেও লাভ হয়নি। ইংলিশরা দেখে শুনেই এগুতে থাকে। ইংল্যান্ড দল কোনো উইকেট না হারিয়ে ৮ ওভারে ৫০ রান করে ফেলে। সে সময় মনে হয়েছিল হয়তো অনায়াসেই ম্যাচ জিতে নিবে তারা। তবে তখনই বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের উইকেটে বল হাতে প্রথম আঘাত হানেন সাকিব। ওভারের শেষ বলে তালগোল পাকান সল্ট। আর তাতেই মাহমুদুল্লাহর তালুবন্দি হয়ে ফিরে যান সাজঘরে। এরপরের ওভারে আবার সাকিব এসে ফেরান গত ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকানো ওপেনার জেসন রয়কে। এর মধ্যে এবাদত ফেরান ডেভিড মালানকেও। তখনই যেন বাংলাদেশ ম্যাচ জেতার স্বপ্ন বুনতে শুরু করে।
এরপর সাকিব তোলেন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেটও। পঞ্চম উইকেটে নেমে দেখেশুনে ইংল্যান্ডের রানের চাকা এগোতে শুরু করেন জেমস ভিঞ্চ। তবে তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ান আবার সেই সাকিব। উইকেটরক্ষক মুশফিকের তালুবন্দি করে ফেরান তাকে। এরপর আর সেইভাবে ইংলিশ কোনো ব্যাটার বাংলাদেশের জয় পেতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। অষ্টম ওভারে বল করতে এসে সাকিব তুলে নেন আরেক উইকেট। ইংল্যান্ড দলের রেহান আহমেদকে দলের আরেক অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজের তালুতে বন্দি করেন। আর এতেই যুক্ত হয় তার মুকুটে নতুন পালক। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ওয়ানডে খেলতে নামার আগে সাকিবের উইকেট ছিল ২৯৬টি। এই ম্যাচে ফিল সল্ট, জেসন রয়, জেমস ভিন্স এবং রেহান আহমেদকে সাজঘরে ফিরিয়ে ৩০০ উইকেট পূর্ণ করেন সাকিব। ২২৭ ওয়ানডে খেলে ৩০০ উইকেট শিকার করলেন এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।