সভ্যতার অন্যতম চালিকা শক্তি বলা হয় বিদ্যুৎকে; কিন্তু বর্তমানে দেশের সর্বত্র লোডশেডিং তথা বিদ্যুৎ বিভ্রাট একটি নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে জ্যৈষ্ঠের প্রচণ্ড গরম তার ওপর লোডশেডিং যেন জনজীবনকে করছে অতিষ্ঠ। সারা দিন কর্মব্যস্ততার পর ঘরে ফিরেও যেন শান্তি নেই এই লোডশেডিংয়ের জন্য।
লোডশেডিংয়ের অন্যতম কারণ হলো চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের উৎপাদন কম। সারা দেশে মোট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১৪ হাজার মেগাওয়াট; কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় মাত্র ১১ হাজার মেগাওয়াট। বাকি বিদ্যুতের ঘাটতি লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ অব্যাহত রাখছেন। তার মধ্যে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় বিদ্যুতের উৎপাদন কমেছে। ডলার-সংকটের কারণে কয়লা কিনতে না পারায় বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় অবস্থিত পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন কয়লাসংকটের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। আর ডিজেল দিয়ে ও বিদ্যুৎ উৎপাদন দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সম্ভবও নয়। কারণ ডিজেল দিয়ে প্রতি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হয় ৪০ টাকা, সেই বিদ্যুৎ সাত থেকে আট টাকায় বিক্রি করে এত বড় ফারাক পূর্ণ করা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে দেশে লোডশেডিং তীব্র আকার ধারণ করেছে। উপরিউক্ত পরিস্থিতির পাশাপাশি বেড়েছে তাপমাত্রা, ফলে গরমে বেহাল জনজীবন। এমনকি রাত হলেও কমছে না তাপমাত্রা, বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা। শহরে ছোট জায়গায় অধিক মানুষের বসবাসের ফলে লোডশেডিংয়ে তাদের অবস্থা আরো দুর্বিষহ। তাছাড়া লোডশেডিংয়ের প্রভাব শুধু জনজীবনকে অতিষ্ঠ করছে না তার প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতেও। কেননা বর্তমানে প্রায় সব যন্ত্রপাতি ও কলকারখানাগুলো বিদ্যুৎনির্ভর। ফলে শিল্পাঞ্চলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, বড় বড় হিমাগারে সংরক্ষিত খাদ্যদ্রব্য নষ্ট হচ্ছে, গবেষণাগারে রাখা বিভিন্ন জিনিস যেগুলো নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখা হয় সেগুলো নষ্ট হচ্ছে, হাসপাতালে বিভিন্ন অপারেশন চলাকালীন লোডশেডিংয়ের কারণে খুব ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটছে, রাতের অন্ধকারে পর্যাপ্ত আলো না থাকার কারণে ঘটছে বিভিন্ন অপরাধ।
বিদ্যুতের এই ঘাটতি রোধ করতে বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ ব্যবহার কমানোর নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো সরকারি অফিসগুলোতে ২৫ শতাংশ বিদ্যুৎ খরচ কমানো, অফিশিয়াল মিটিং অনলাইনে করা, শিক্ষার্থী বহনে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার কমানো ইত্যাদি। তাই আমাদের সবার উচিত এই দুঃসময়ে বিদ্যুতের অপচয় না করে তা যথাযথভাবে কাজে লাগানো।