২৪ এর জুলাই লিখেছিলাম দামাল ছেলে-মেয়েরা হুজুগে মেতে দেশ রসাতলে নিয়ে যাচ্ছে। এখন ২৫-এ এসে দেখি দেশ তলে ঠিকই গিয়েছে কিন্তু রসটা আর নাই।
আরও বলেছিলাম লক্ষ মানুষের আন্দোলনের ফল খাবে অল্প কিছু নেতা, যারা এই আবেগে-পূর্ণ কিশোর-কিশোরীদের রাস্তায় নামিয়ে অর্জিত ফল দখলে নিয়ে তাদের স্বপ্ন ভাংবে, আর দেশের মেরুদন্ড ঝাঁঝরা করে দিবে। তাই হয়েছে, এতো হওয়ারই কথা।
যে কোটা নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছিলো, এখন কী সে কোটা মুছে গিয়েছে? তখন তারা বলেছিলো দেশে কোন কোটা থাকবে না। মেধাই হবে কোটা। মানে সরকারী চাকরির শতভাগ পাবে মেধাবীরা, কিন্তু এখন কী হয়েছে? মেধাবীরা এখন নাকি ২৪-এর নেতা! এটা কেমন কথা? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে বস্তির টোকাই যে আন্দোলন করলো তা একটা অবাঞ্চিত ভাবে জন্ম নেয়া রাজনৈতিক দলের নেতাদের দখলে চলে গেল?
এখন জুলাই যোদ্ধারা ট্রেনে ভ্রমন করে কিন্তু ভাড়া দিবে না বলে পন করেছে, তারা সব কিছু দখলে নিবে। তারা রাজনীতি করবে বাকিরা তাকিয়ে থাকবে, রাজনীতি করতে পারবে না। তাই এখন আওয়ামী-লীগ প্রায় নিষিদ্ধ, এরশাদের জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের পথে, বিএনপি চাপের মুখে। যেহেতু ছাত্ররা ২৪এর দখলকারী সেহেতু তারাই রাজনীতি করবে, বাকিরা রাজনীতি থেকে দূরে চলে যাবে। তাদের চিন্তা দেশের সম্পদ তারা খাবে আর বাকিরা তাদের ধাওয়া খাবে।
দেশটা অরাজকতায় হারিয়ে গেলো, যে যেমন পারলো সে তেমন ভাবে অবাধে লুট করলো। রাজনৈতিক নেতাদের বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দিলো, আওয়ামী-লীগ এর শত শত নেতা-কর্মী পিটিয়ে, কুপিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে মারলো। কেউ এর দায় নিলো না, কেউ তেদের বিচার করলো না। উলটা সরকার ও প্রশাসন তাদের পুরষ্কৃত করল!
৭৫এ খুনিরা গর্বের সাথে বলতো তারা দেশের জন্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। আজ ২৫-এ এসে আর এক দল জনসম্মুখে গর্বের সাথে বলছে তারা বড় স্থাপনায় হামলা করে পুড়িয়ে না দিনে সরকার ভয় পেত না। পুলিশ হত্যা না করলে পুলিশ আন্দোলনের মাঠ থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হতো না। তাই তারা শতশত পুলিশ হত্যা করল। তাদের আহ্বানে লাখ লাখ মানুষ পথে নেমে এলো, হাজার হাজার মানুষ মারা গেল। আমরা আজও জানতে পারলাম না কে কি ভাবে মারা গেলো?
এই দেশে ক্ষমতাবানদের হাতে রাজনৈতিক হত্যার বিচার কখনো হয়নি, হবেও না, আমরা সেটা জানি। তাই আমরা রাজনৈতিক হত্যার বিচার চাওয়া ভুলেই গিয়েছি। ফলে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠলো। দেশের মানুষ এর ধারাবাহিকতায় ব্যাক্তিগত, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিরোধের মূল্য দিলো জীবন দিয়ে, আর কিছু মানুষ তাদের আক্রোশ মিটালো জীবন নিয়ে।
এর ধারাবাহিকতায় জন্ম নিলো এক আজব রাজনৈতিক দল, যারা জন্ম নিয়েই নিজেদের ক্ষমতাসীন দল বলে মনে করতে শুরু করলো। কি ভয়ঙ্কর চিন্তা-চেতনা! তারা নিয়মতান্ত্রিক পথে বিশ্বাসী না, তারা আক্রমন করে ও জোর করে সব দখল করতে বদ্ধপরিকর। এই বয়সের ধর্মই এমন, কিন্তু তাদের যারা নাড়াচাড়া করেছে ও করছে তারা কেন এমন পথ গ্রহণ করলেন?
কারণতো একটা আছেই, একজন এনজিও নোবেন এর সাথে একদল এনজিও কর্তা কিছু শিক্ষক সরকারের হাল ধরলেন। ফলে দেশটা আর রাষ্ট্র থাকলো না একটা অরাজনৈক সরকার দেশটাকে এনজিও বানিয়ে দিলো!
২৪ নিয়ে অনেক মিথ আছে, তার একটা ২৯-৫০ মিলিয়ন ডলারের লেনদেন। জামায়াত ও বিএনপি ইউনুস গং-এর সাথে মিলে কিছু চরমপন্থি দল সাথে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রাপ্ত ডলার আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য মাঠপর্যায় বিতরণ করে। এরা প্রায় পাঁচ বছর ফিল্ডওয়ার্ক করে এমন ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনা করে। কিন্তু ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাওয়ায় মেইনস্ট্রিম রাজনৈতিক দলগুলো কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যেতে বাধ্য হয়। কারণ এমন ধ্বংসযজ্ঞের দায় কোন রাজনৈতিক দল নিতে চাবে না। তাই এমন ধ্বংসের দায় নিয়ে নেয় ছাত্র নামের একটা জঙ্গী গোষ্ঠি, এরাই বিজয়ের পরে এর ফলটাও নিজেদের করে নেয়।
আন্দোলন করা আর সেই আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করে ঠিক ভাবে পরিচালনা করা এক না। এই কথা আমাদের মত দেশের রাজনৈতিক নেতারা মনে রাখেন না, আর এমন এক ধ্বংসাত্মক আন্দোলনে অপরিনামদর্শী ছাত্রদের টেনে এনে রাজনীতিকরা মোটেই ঠিক কাজ করেননি।
তাদের মাথায় রাখা উচিত ছিলো ইউনুসের মত একজন নীতিহীন মানুষকে সামনে রেখে দেশকে বাজির কোটে নিয়ে যাওয়া ঠিক কাজ হচ্ছে না। জামায়াত আর ইউনুসের পক্ষে এমন গর্হীত কাজ করতে বিবেকে আটকায় না, কিন্তু বিএনপি তাদের ফাঁদে পা দিলো কেন? আওমীলীগ ও হাসিনাকে শিক্ষা দিতে? বিএনপির বোঝা উচিত ছিলো এতে হাসিনা ও লীগের সাথে সাথে দেশেরও ক্ষতি হবে, আর দেশের ক্ষতি হলে কি বিএনপির কোনভাবে লাভবান হওয়ার পথ আছে?
কেউ যদি ভাবেন হাসিনা দূর্নীতি ও অপ-শাসনের জন্য ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন তারা তবে নিঃসন্দেহে বোকার স্বর্গে বাস করছেন।
হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন আপোষহীনতার জন্য, দেশকে ভালোবাসার জন্য, অপরাধীদের দমন করার জন্য। অনেকে হয়তো বলবেন ছাত্র-লীগ অনেক অপরাধ করেছে, আসলেই কী তাই? ছাত্র-লীগ যাও করেছে তা ছিলো এক হাজার হাজার শাখাময় বৃক্ষের একটা শাখার মত। আর এখন সেই বৃক্ষটাই কেটে দেয়া হচ্ছে।
তবে আমরা এখন কি চাই? একটা শাখা না গাছটা রক্ষা করব? দেশের একটা শাখাও এখন অক্ষত নাই। মিস্টার ফখরুল ক্যামেরার সামনে এসেই মুখ থেকে প্রথম শব্দ বলতেন “ফ্যাসিস্ট হাসিনা”! এখন তিনি কি বলেন? ইউনুসকে তিনি এখন ফ্যাসিস্ট বলেন না কেন? কার ভয়ে তিনি এখন কথা বলেন না? সকাল-সন্ধ্যা তিনি এখন ইউনুসের সাথে দেখা করেন, মন্ত্রণা দিয়ে আসেন। কী মন্ত্রণা দিচ্ছেন তিনি ইউনুসকে? আমরা কি তা হলে ধরে নিব ইউনুসের এইসব অপকর্মের তিনিও অংশীদার?
আমরা বলছি না হাসিনা খুব ভালো ছিলেন, তবে হাসিনা সবার থেকে ভালো ছিলেন তা আমরা বলছি নির্দ্বিধায়। এমন ব্যাপক উন্নয়নের বাজি এর আগে কোন প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপ্রধান ধরেননি। গণতন্ত্র মানুষের মৌলিক অধিকার না। {পৃথিবীর বহু দেশে ভোটাধীকার নাই, তাই বলে কী তারা কোন রকম সমস্যায় আছে? নাই, বরং অ-জনতন্ত্রী (গণতন্ত্র আর জনতন্ত্র এক না, ‘গনতন্ত্র’ নামে যা চলছে তা আসলে ‘জনতন্ত্র’) দেশগুলোতে হাহাকার নাই। তারা সব দিকেই ভালো আছে। সব সমস্যা জনতান্ত্রীক দেশগুলোতে।} কিন্তু সুন্দর জীবন পাওয়া শুধু মানুষ না, প্রতিটি প্রাণীর অধীকার। আর এমন অধিকার এদেশের জনমানুষ স্বাধীনতার পরে প্রথমবার পেয়েছিলো। কিন্তু জঙ্গি জামাত আর বিএনপি’র তা ভালো লাগলো না, তাদের ভালো লাগে অরাজকতাপূর্ণ একটা দেশ। কারণ ওরা দূষ্কৃতিকারী তাই অরাজক দেশই তারা চায়, অরাজক দেশ লুটে খেতে বেশ লাগে। এমন কর্মের মূল্য বিএনপি জামাত দিবে, দিতেই হবে। আমরা সে দিনের অপেক্ষায় থাকলাম।
সরকার হলো একদল দামাল ছেলের পছন্দ মত, তাই একটা এনজিও মার্কা সরকার গঠণ করা হলো যেখানে জঙ্গিনেতাও অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেলো! সেনাবাহিনীর সহায়তায় জামায়াত সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ পদগুলো খালি করে দখলে নিলো। বিএনপি নোবেলের চক্করে সে দিকে না গিয়ে সরকার গঠনের স্বপ্নে মেতে থাকলো, এদিকে দেশের দখল চলে গেলো দূর্বৃত্তদের হাতে। বন্ধ করে রাখা চোখ বিএনপি যতদিনে খুলেছে ততদিনে আর কিছুই বাকি নাই, তারা এখন দেশটা সাথে নিয়ে অন্ধকারের দিকে ছুটে চলছে।
হাসিনা বা আওয়ামীলীগ কর্তৃত্ববাদী সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলো, প্রতিপক্ষকে কোন রকম স্পেস ছেড়ে দেয়নি। কথাটা মিথ্যা না, সে কথা আমরা জানি। তারা কর্তৃত্ববাদী বলেইতো কথিত ভালো মানুষরা তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করল, তাদের ক্ষমতা থেকে বের করে দেয়া হলো। বুঝলাম তারা তাদের কর্মফল ভোগ করছে। তাদের কেউ দেশ ছেড়ে চলে গেলো আর কেউ পৃথিবী ছেড়েই চলে যেতে বাধ্য হলো।
আমার প্রশ্ন তারা কর্তৃত্ববাদী বলে খারাপ, নোবেল সরকারতো ভালো মানুষদের নিয়ে গঠিত(!)। যদি তাই হয় তবে বর্তমান এনজিও সরকার কর্তৃত্ববাদিতার দিকে গেলো কেনো? যে পন্থায় সরকার চালিয়ে হাসিনা খারাপ হিসাবে প্রতিপন্ন হলো তার থেকে শতগুন বেশি স্বৈরাচারী পন্থায় সরকার চালিয়ে ইউনুস সাহেবের সরকার ভালো হিসাবে সার্টিফাইড হয় কীভাবে?
বেচেঁ থাকা মানুষের সব থেকে বড় অধিকার, সে অধিকার মৌলিক অমৌলিকতা মানে না। আওয়ামী-লীগকে পছন্দ করে বলে তাদের সেই বাচাঁর অধিকার বাতিল হয়ে গিয়েছে? তবেতো একদিন আওয়ামী-লীগ না করার জন্য অনেকের প্রাণ চলে যেতে পারে। সে পরিস্থিতি কি সুখকর হবে?
কোন মৃত্যুই কাম্য না সেখানে অপঘাতে এবং হত্যার শিকার হওয়াতো মহা বিপর্যয়কর।
এই সরকারের ঘুরে দাড়ানোর আর সুযোগ নাই বলে সরকার এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, তাই এই সরকার প্রতিপক্ষকে দমন করতে যতটা সম্ভব কঠোর পন্থা অবলম্বন করতেও পিছুপা হবে না। এখন যদি কেউ মনে করে আওয়ামী-লীগ এই সরকারের একমাত্র প্রতিপক্ষ তাদেরকে একটা কথাই বলা যায়, তা হলো “গর্দভ”।
এই সরকারে প্রতিপক্ষ প্রতিটা রাজনৈতিক দল। এরা দেশ থেকে রাজনীতি নির্বাসনে পাঠাতে চায়। আওয়ামী-লীগের ভয় ওরা কাটিয়ে উঠতে পারলে দেশ আফগানিস্তানে পরিনত করবে। কারো কোন অধিকার থাকবে না তখন এই দেশে, আর মানবাধিকারের কথা ভুলে যাবে এই দেশের মানুষ।
এখন দেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করে, এই দেশকে আবার উন্নয়নের পথে নিতে হলে শেখ হাসিনার আওয়ামী-লীগকে ফিরিয়ে আনার কোন বিকল্প নাই। এমন ভাবনায় কোনরকম ভুল আছে? অধিকাংশ মানুষতো একত্রে ভুল পথে থাকতে পারে না, তাই আমার মনে হয় এই ভাবনাই ঠিক।
এমন বালগার, যোগ্যতাহীন সরকার পৃথিবীর আর কোন দেশে আছে বলে আমার জানা নাই। আমাদের এখন অপেক্ষায় থাকতে হবে এটা দেখার জন্য যে এই দখলদার সরকার কোন পথে তাদের পদ হারায় এবং দেশ কোন পদ্ধতিতে তার পথ খুঁজে নেয়।








